• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

২১ আগস্ট হামলার সাক্ষী আমি

প্রকাশিত: ১৪ নভেম্বর ২০১৮  

আলতাফ হোসেন বিপ্লব

আপা (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) ২১ আগস্ট যে ট্রাকে ছিলেন, তার ডান পাশে ব্যাকডালা ধরে আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম। তখন আমি ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। যখন আপা বক্তব্য দিতে উঠলেন, ঠিক তখন বিকট আওয়াজ করে গ্রেনেড ফাটল। আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলাম। যখন জ্ঞান ফিরল তখন কেউ একজন আমাকে টেনে এক বিল্ডিংয়ে নিল। এরপর তৎকালীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিলের গাড়িতে করে আমাদের ৮-১০ জনকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়। আমি এ মামলার সাক্ষী। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ব্যাপারে আমাদের কাছে এমন স্মৃতিচারণই করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক আলতাফ হোসেন বিপ্লব। তিনি এবার ঢাকা-২ আসনের দলীয় মনোনয়ন প্রার্থী। এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমনটাই জানান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দেলোয়ার হোসেন মহিন।

কেমন আছেন? বিপ্লব: আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভালো।

আপনি তো অনেকদিন রাজনীতিতে, আপনার ছাত্রজীবনের রাজনীতি নিয়ে কিছু বলুন...

বিপ্লব: আমার রাজনীতির বয়স প্রায় ২৮ বছর। আমি তৃণমূল থেকে উঠে এসেছি। আমি ১৯৯১ সালে কেরানীগঞ্জ ইস্পাহানী ডিগ্রী কলেজের নির্বাচিত এজিএস। সেই থেকে আমার পথ চলা শুরু। কেরানীগঞ্জের উপজেলা, ঢাকা জেলা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সঙ্গেও দীর্ঘদিন জড়িত ছিলাম। শুধু জড়িত না পোস্টেড নেতা ছিলাম। ২১ আগস্ট হামলার সময় আমি ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। ছাত্রলীগের সঙ্গেও আমার রাজনীতির ১৮ বছর কেটেছে।

ছাত্রলীগের পরে যুবলীগ যুক্ত হলেন নাকি আওয়ামী লীগে?

বিপ্লব: আমি আসলে কখনোই যুবলীগে যুক্ত হইনি। কিছুদিন পোস্ট ছিল না কিন্তু রাজনীতিতে যুক্ত ছিলাম। গত কমিটিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সহ-সম্পাদকের পোস্ট পাই। এবারো সহ-সম্পাদকের পোস্টেই আছি।

আপনি তো এবার সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী। নির্বাচন নিয়ে ভাবনা কী?

বিপ্লব: জ্বি, আমি এবার ঢাকা-২ কেরানীগঞ্জ থেকে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক। আর আমার এলাকার মানুষও আমাকে চায়। আমার সঙ্গে আছেন খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদ।

মনোনয়ন প্রত্যাশী দুই জন স্ট্রং প্রার্থী আছেন। দল আপনাকে কেন মনোনয়ন দেবে?

বিপ্লব: আমি বরাবরই কর্মীবান্ধব। আর এলাকার মানুষের সঙ্গে আমার সম্পর্ক তেমনই। আমি জন্ম থেকে কেরানীগঞ্জে স্থায়ীভাবে বসবাস করি। এখানকার নিয়ম-কালচার সবকিছুর সঙ্গে পরিচিত। লোকাল এমপি হলে সব ব্যাপারে সে অবগত থাকবে। আর আমি দলের সঙ্গে ছিলাম, আছি। তাই আমি আশা করতেই পারি।

আপনার এলাকার মূল সমস্যা কী? এমপি হলে আপনি এসব সমাধান করবেন কীভাবে?

বিপ্লব: আমার মতে এলাকার মূল সমস্যা ভূমি দখল। আর এর মাধ্যমেই ছড়িয়ে পড়ে সন্ত্রাস। এ ব্যাপারে যে ন্যায্য দাবিদার আমি তার পক্ষে থাকবো। আর কোনো প্রকার দুর্নীতি আমি করতে দেব না। আমার সময়ে কেউ কারো জমি অবৈধ্যভাবে দখল করতে পারবে না। এতটুকু বলতে পারি।

ভূমি সমস্যা ছাড়া আপনার এলাকায় আর কী কী সমস্যা রয়েছে? এসব সমাধানে আপনার ভাবনা...

বিপ্লব: ঢাকার পাশেই আমাদের এলাকা। কিন্তু আমাদের নাগরিক সুবিধা নেই বললেই চলে। গ্যাস, ওয়াসা থেকে বঞ্চিত আমরা। লোড শেডিং, রাস্তাঘাট, আইনি কাজে বাধা, মাদক সমস্যাগুলো উল্লেখযোগ্য। তাই ক্ষমতায় আসলে আমি সবার আগে গ্যাস আর ওয়াসার পানির ব্যবস্থা করবো। প্রতিটা গ্রামে বা ইউনিয়নে একটা ওয়াসার পাম্প থাকলে পানির কষ্ট দূর করা সম্ভব। লোডশেডিংয়ের ব্যাপারে আমি গ্রামে গ্রামে সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে চাই। এতে বিদ্যুতের চাপ কমবে আর নিজেরা বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে পারব। রাস্তাঘাটের ব্যাপারে আমি কিন্তু জানি কোথায় রাস্তা দরকার, কোন রাস্তা ঠিক করতে হবে। আইনের ব্যাপারে আমি কখনোই বাধা দেব না। আমার দলের লোক আইন ভাঙলে তার ব্যাপারেও কোনো ছাড় নেই।

মাদকের ব্যাপারে আপনার ভূমিকা কী হবে?

বিপ্লব: বর্তমান বাংলাদেশে মাদক একটা বড় সমস্যা। আমি মাদকের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স ভূমিকা পালন করবো। মাদকের ব্যাপারে কোনো ছাড় নেই। প্রশাসনের সাহায্যে মাদক নির্মূল করা হবে। মাদক আনা-নেয়া আর মাদক বিক্রি বন্ধ করতে পারলে মাদক ৭৫ শতাংশ কমে যাবে। বাকি ২৫ শতাংশ সামাজিক সচেতনতা ও পারিবারিকভাবে বন্ধ করতে হবে। আর তা সম্ভব আমি মনে করি।

বেকারত্ব বাংলাদেশের একটা বড় সমস্যা, এ ব্যাপারে এলাকায় কী ভূমিকা নেবেন?

বিপ্লব: বেকার দুই ধরনের শিক্ষিত আর অশিক্ষিত। যারা শিক্ষিত তাদের ব্যাপারে আমার সর্বোচ্চ সাহায্য থাকবে। আমার এলাকার মানুষের শিক্ষিতদের চাকরির জন্য আমি যে কোনো তদবিরের চেষ্টা করব। বিভিন্ন প্রাইভেট জবের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করব। আর অশিক্ষিতদের ট্রেনিং দিয়ে মাছ চাষ, পল্টি খামার, গরু মোটা-তাজাকরণ প্রকল্পের ব্যবস্থা করবো। আর তাদের ব্যক্তিগত হোক বা ব্যাংকের মাধ্যমে হোক অর্থের যোগান দেব। আমার হাতে যত রকম সুযোগ থাকবে আমি তা কাজে লাগাবো।

শিক্ষা, বিনোদন ও খেলাধুলার ব্যাপারে কিছু বলবেন...

বিপ্লব: মানুষ শিক্ষিত না হলে তারা নিজেদের ভালো-মন্দই বুঝবে না। তাই সবাইকে শিক্ষিত হতে হবে। বাচ্চাদের স্কুলে আসতে আগ্রহী করতে ব্যবস্থা নেবো। তাদের জন্য স্কুলে নাস্তার ব্যবস্থা করব। স্কুলে বিভিন্ন বিনোদনের ব্যবস্থাও থাকবে। এছাড়া বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করব। বিনোদন জীবনের একটা বড় অংশ তাই এ ব্যাপারে আমার প্লান আছে। আমাদের এখানে অনেক ট্যুরিস্ট স্পট আছে যা পরিচর্যা বা নজর দেয়ার অভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এগুলো সংস্কার করব। খেলাধুলার জন্য মাঠ, ক্লাব ও বিভিন্ন কমিটির সবাইকে আগ্রহী করে গড়ে তুলব। খেলাধুলার ব্যাপারে আমার সহযোগিতা সব সময় থাকবে। এক কথায় আমাকে ডাকলে সবাই পাবে।

আপনার এলাকার মানুষের উদ্দেশে কিছু বলতে চান...

বিপ্লব: আসলে আমি এলাকারই সন্তান। নিজের সন্তানকে মানুষ যেভাবে যত্ন করে বাইরের ছেলেকে তেমন করে না। আমি যেভাবে দরদ বুঝবো অন্য কেউ বুঝবে না। আমাকে ডাকলেই তারা সব সময় পাশে পাবে। এলাকার মানুষের জন্য ২৪ ঘণ্টা আমার দরজা খোলা, তারা এটা জানে। যদি মনোনয়ন পাই, তবে সিদ্ধান্ত তাদের ওপর ছেড়ে দেবো।

বিপ্লব:  ধন্যবাদ।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –