পদ্মা সেতু স্বাধীন জাতিরাষ্ট্রের একটা অসম্পূর্ণতা মিটিয়েছে
প্রকাশিত: ২৮ জুন ২০২২
পদ্মা সেতু স্বাধীন জাতিরাষ্ট্রের একটা অসম্পূর্ণতা মিটিয়েছে
হার্ডিঞ্জ ব্রিজের সঙ্গে পদ্মা সেতুর কেন তুলনা করে কথা হচ্ছে? এমন তুলনার কি কোনো জায়গা আছে আসলে? হার্ডিঞ্জ সাহেবের নামে তৈরি ঈশ্বরদী-ভেড়ামারার সেতুটি পদ্মার ওপর তৈরি প্রথম সেতু বটে; তবে এই সেতু ব্রিটিশ প্রশাসনের সঙ্গে মধ্যবঙ্গকে যুক্ত করার সেতু। এতে বাংলার ওপর ব্রিটিশ উপনিবেশের হাত আরও লম্বা এবং প্রভাব আরও গভীর হয়েছে। আমাদের পদ্মা সেতু রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের মধ্যখণ্ডকে সরাসরি যুক্ত করেছে। নামে ও কাজে দুই সেতুর চরিত্র ও অভিমুখ আলাদা।
এদিক থেকে পদ্মা সেতু স্বাধীন জাতিরাষ্ট্রের একটা অসম্পূর্ণতা মিটিয়েছে। আকাশ, নদী ও সেতুপথে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের দক্ষিণবঙ্গমুখী বর্ণিল শোভাযাত্রা হয়তো সেই ভূমির সঙ্গে ভূমির মিলনেরই রাষ্ট্রীয় উদ্যাপন। দেশের বিরাট একটা অংশ, পদ্মা নদীর এপার-ওপার এই প্রথম জাতীয় রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হলো। যমুনা সেতু ছিল এ ব্যাপারে প্রথম, তারপর মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র। পদ্মা সেতু দিয়ে রাষ্ট্রীয় একীকরণ (ইনটিগ্রিটি) পুরা করা হলো। এই কাজের কাজি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ সরকার অবশ্যই অভিনন্দনের দাবিদার।
আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতা নিয়ে আধুনিক উন্নয়নবাদী জাতিরাষ্ট্র সবল হয় না। এটা হলো পদ্মা সেতুর দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক তাৎপর্য। এই তাৎপর্য কোনো দলের মুখাপেক্ষীও নয়। বর্তমানের কথা ভিন্ন হলেও আখেরে তা কোনো দলকে বঞ্চিতও করবে না। কিন্তু ঢাকা কতটা সাফল্যের সঙ্গে একে কাজে লাগাতে পারবে, সেটাই হলো এখন বিষয়। ঢাকা কি দক্ষিণবঙ্গকে মোলাকাত করতে প্রস্তুত? দক্ষিণ থেকে যে বিপুল জনস্রোত ঢাকায় আসবে, ঢাকা দিয়ে বাকি দেশ কতটা দক্ষিণের সঙ্গে অর্থনৈতিক কারবার চালানোর জন্য তৈরি, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। পদ্মামুখী এক্সপ্রেস হাইওয়ের সঙ্গে গাজীপুর-ময়মনসিংহ এবং চট্টগ্রাম-সিলেটের যোগাযোগ মসৃণ করার কাজ এখনো শেষ হয়নি। পদ্মা সেতুতে রেলও এখনো যোগ হয়নি।
বাংলাদেশ তো আসলে তিন নদীর বদ্বীপ। প্রতিটা খণ্ড যুক্ত হওয়া মানে দেশ ভেতরের দিকে আরও বড় এবং নিবিড় হওয়া। ভূমিতে রাজধানীর সঙ্গে যুক্ত না হলে বিযুক্ত এলাকার মানুষ তো পূর্ণ নাগরিকতাই ভোগ করে না। যাদের জীবনে পদ্মা নদীর ভূমিকা এত মৌলিক, জরুরি প্রয়োজনে যাদের অসহায় অপেক্ষায় পড়তে হতো ফেরিঘাটে, এই সেতু প্রথমত তাদের। রাজনীতি বদলাবে, কিন্তু সেতুটা তাদের থাকবে। নিয়ম ভেঙে হাজার হাজার মানুষের সেতুতে উঠে পড়ায় দেখা গেছে তাদের এই অভূতপূর্ব আনন্দের প্রকাশ। জনগণ সেতুর ওপর এভাবে তাদের মালিকানা বুঝে নিল। সেতু উদ্বোধনের দিন তাই অনেক গল্প তৈরি হয়েছে। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ক্ষণ।
তবে ‘মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, আমি পদ্মা সেতু দেখেছি’ ধরনের আলাপ শিশুসুলভ। যেন শিশুরা ভাবছে তারা জননীর সমান। মুক্তিযুদ্ধ না হলে পদ্মা সেতু হতো কি না সন্দেহ। আর মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের সঙ্গে যে বিপুল ত্যাগ ও রক্তদান জড়িত, তার সঙ্গে একটা সেতু কেন, কোনো কিছুরই তুলনা হয় না। তাই পদ্মা সেতু দেখলেই মুক্তিযুদ্ধ দেখা হয় না, তার অন্যতম অবদানই দেখা হয় শুধু।
পদ্মা শেষ পর্যন্ত একটা মহানদীই। ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে মিলে এই নদী বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান জীবননালি। গঙ্গা যবে থেকে পদ্মা নাম নিয়ে পূর্ব দিকে সরে এসেছে, তবে থেকে পূর্ব বাংলা তথা বাংলাদেশের বিকাশের শুরু। শত বিপর্যয় ও ধ্বংসের পরও এই দেশ যে টিকে আছে খাদ্যে ও বসতিতে, তার একটা বড় অবদান পদ্মা নদীর। সে জন্য নদীর চেয়ে তার ওপর বানানো সেতু কখনো বড় হতে পারে না। নদীর কথা চিন্তা না করে তাই সেতু নিয়ে থাকলে হবে না। বাংলাদেশের বেশির ভাগ নদীই এখন দারুণ অসুস্থ এবং মারাত্মকভাবে আক্রান্ত।
স্বাধীনতার যুগে জাতি, জাতীয়তাবাদ ও দেশের প্রতীক ছিল নদী। এখনকার উন্নয়নের যুগের প্রতীক সেতু। কিন্তু নদীই আসল। নদী না থাকলে তো মরু। মরুতে সেতু মূল্যহীন। পদ্মা সেতু নিয়ে কথাবার্তা তাই পদ্মা নদীরই আলাপ। নদীর সঙ্গে মিলিয়েই একে দেখতে হবে। এখন প্রচারণার সঙ্গে সঙ্গে সেতু নিয়ে আলোচনাও হচ্ছে। প্রচারণা থেমে যাবে, সেতুচিন্তা কিন্তু চলতে থাকবে। সেতুসাহিত্যও ভালো, তা যদি সুস্থ মস্তিষ্কে করা হয়। না হলে পদ্মা সেতু অর্থনৈতিকভাবে আগুয়ান হওয়ার যে সুযোগ তৈরি করেছে, তার সদ্ব্যবহার হবে না। অসদ্ব্যবহার অবশ্য হতে পারে।
প্রধান অসদ্ব্যবহার হলো, সেতুর রাজনীতিকরণ। লালন বলেছেন চোখের আড়ে পাহাড় লুকানোর কথা। আমরাও সেতুর খিলানের আড়ালে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, মানবাধিকার এবং দুর্নীতি ও অর্থপাচারের ইস্যু ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা দেখছি। উন্নয়নের ধুলায় মানুষ অন্ধ থাকে না বেশি দিন। পদ্মা সেতুর কৃতিত্ব অবশ্যই আওয়ামী লীগ সরকারের কিন্তু তার মানে এই নয় যে যা পাইনি, যা থেকে দেশ বঞ্চিত, তার বেদনা মানুষ ভুলে যাবে। তা ছাড়া বাঙালি বড়ই বিস্মৃতিপ্রবণ; কারও কারও ভাষায় ‘অকৃতজ্ঞ’। নদীর মুশকিল আসানের পর তারা অনেক সময়ই মাঝিকে আর মনে রাখে না।
যে দেশে চালচুলাহীন লোকও নিজের বিয়েতে ব্যান্ড পার্টি ভাড়া করে, সে দেশে পদ্মা সেতু নিয়ে উচ্ছ্বাস একটু বেশিই হবে। এটাই এই দেশের রীতি। কিন্তু বাইপোলার ডিসঅর্ডারে ভোগা বাংলাদেশিদের এক দল পদ্মা সেতুকে স্বর্গের সিঁড়ি ভাবছে, আরেক দলের মন খারাপ। গণহিস্টিরিয়াগ্রস্ত এই দুই দলের মধ্যখানেই বাস্তবতা পদ্মার বিপুল চরের মতো জেগে আছে। সেই চরটা হলো আমাদের রাষ্ট্রীয় সক্ষমতার আত্মবিশ্বাস। রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা একটা বড় ব্যাপার, এটা নাগরিকদের রাজনৈতিক আত্মবিশ্বাসও দেয়। অপরাপর দেশের হীনচোখে দেখার দৃষ্টির জবাব দেয়।
তবু সেতুর চেয়ে পদ্মা নদীই বড়। নদীটা শুকাতে বসেছে। ভরা বর্ষায়ও চর জেগে আছে। রাজশাহীর দিকের পদ্মার অবস্থা তো আরও খারাপ। কারণ, উজানের পানি বঞ্চনা। সেতুর কারণে হয়তো আরও বদল ঘটবে। কিন্তু পদ্মা কি আমাদের শত্রু যে তাকে জয় করতে হবে? বা মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের সঙ্গে তুলনা করতে হবে? প্রকৃতিকে দখল, শাসন, জয় করার এই চিন্তাই কিন্তু উন্নয়ন চিন্তার মধ্যে থেকে যাওয়া সমস্যা। এমন চিন্তাই উন্নয়নকে প্রকৃতি ও মানুষের বিপক্ষে দাঁড় করায়।
ফারুক ওয়াসিফ লেখক এবং প্রতিচিন্তার নির্বাহী সম্পাদক।
[email protected]
#প্রথম আলো।
- দিনাজপুরে নানা আয়োজনে মে দিবস পালিত
- গরমে পটোল খাওয়ার ৭ উপকারিতা
- শেষ ওভারে মুম্বাইকে হারালো লখনৌ
- শাকিবের বিয়ের ইঙ্গিত দিলেন আরশাদ আদনান
- ইসলামে শ্রমের মর্যাদা, গুরুত্ব ও অধিকার
- শান্তি ও উন্নয়ন নিশ্চিতে ঐক্যবদ্ধ ইইউ ও বাংলাদেশ:পররাষ্ট্রমন্ত্রী
- ‘ইভিএমে ত্রুটি প্রমাণ করতে পারলে কমিশনের সবাই পদত্যাগ করবো’
- নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন ১৮৫ দিন: শিক্ষামন্ত্রী
- তাপপ্রবাহ কবে কমবে, জানালো আবহাওয়া অফিস
- জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান
- ইসরাইলগামী জাহাজে হামলার ভিডিও প্রকাশ
- সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড
- নির্বাচনে অনিয়ম হলে কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত করা হবে: ইসি
- ‘সব প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে’
- মহান মে দিবসের শুভেচ্ছা জানালেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী
- আজ মহান মে দিবস, শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন
- হিলিতে রচনা প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ রক্তিম
- বিরামপুর তীব্র গরমে ধস নেমেছে টমেটোর বাজারে
- দিনাজপুরে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ১০
- বীরগঞ্জে তীব্র তাপদাহে চরম দুর্ভোগে প্রাণিকূল
- বিরামপুরে ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ গেল কিশোরের
- গরমে যেসব উপকার পেতে আনারস খাবেন
- দেশের পথে এমভি আবদুল্লাহ
- দিল্লিকে সহজেই হারাল কলকাতা
- শাকিবের তৃতীয় বিয়ে নিয়ে যা বললেন অপু বিশ্বাস
- কোরবানির নিয়তের পর পশু বিক্রি করার বিধান
- ঠাকুরগাঁওয়ে হিট স্ট্রোকে নারী শ্রমিকের মৃত্যু
- মিনিটেই নকল ‘স্মার্ট কার্ড’, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশি কর্মীরা
- সারাদেশে হিটস্ট্রোকে ৩ জনের মৃত্যু
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ হোক মানুষের কল্যাণে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
- সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশ: অর্থমন্ত্রী
- দিনাজপুরের হাকিমপুরের হিলিতে শিক্ষক-কর্মচারী কো-অপারেটিভ ক্রেডিট
- ৬ শতাধিক পটল গাছ উপড়ে ফেলল দুর্বৃত্তরা, দিশেহারা কৃষক
- ঈদে পার্বতীপুর- জয়দেবপুর রুটে চলবে ৩টি বিশেষ ট্রেন
- চুমু খেতে চাওয়া সেই পীরজাদা হারুনকে দলে নিলেন নিপুণ!
- বীরগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
- বীরগঞ্জে হবিবর রহমান স্মৃতি রোগ প্রতিরোধ গবেষণা কেন্দ্র উদ্বোধন
- আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এডিবির আরো সহায়তা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী
- ইস্তিসকার নামাজের সময় ও বিধি-বিধান
- ঈদের দিন বন্ধ থাকবে আন্তঃনগর ট্রেন
- বুয়েটে অপরাজনীতি হচ্ছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে: সেতুমন্ত্রী
- গোর-এ-শহীদ ময়দানে ৬ লাখ মুসল্লির নামাজ আদায়
- টানা ৬ দিন বন্ধের পর হিলি স্থলবন্দরে আমদানি-রফতানি শুরু
- দিনাজপুর জেলা ছাত্রলীগের ৫০০ বৃক্ষের চারা বিতরণ-রোপণ
- আইপিএলের মাঝপথে হঠাৎ দেশে ফিরলেন মুস্তাফিজ
- দিনাজপুরে হলিল্যান্ড কলেজে ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
- রাইমা সেন কেনো হুমকি!
- কাল থেকে ১৪ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
- দিনাজপুরে অনাবৃষ্টি আর দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে লিচুর মুকুল
- সংগত কারণ ছাড়া প্রকল্পের ধীরগতি মানা হবে না: রেলমন্ত্রী