বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু এবং একটি কবিতা
প্রকাশিত: ১৮ ডিসেম্বর ২০২২
ড. মুসা তোপকায়া
সময়টি ২০১৯ সালের মে মাস, তুরস্কের এস্কিশেহিরে একজন বাংলাদেশি তরুণের সঙ্গে আমার পরিচয় হয় এবং এই ছেলেটিই আমার পরিচিত প্রথম বাংলাদেশি। তখন পর্যন্ত অন্যান্য তুর্কির মতো বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে আমার জ্ঞান ছিল খুবই সীমিত। আমার দেখা এই ছেলেটি হলো আমার প্রিয় বন্ধু শাকিল রেজা ইফতি। তার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে আমার আগ্রহ বাড়তে থাকে, বিশেষ করে বাংলাদেশি সাহিত্য সম্পর্কে।
তুর্কি সাহিত্যের একজন একাডেমিক হিসেবে আমার শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গি মূলত তৈরি হয় সাহিত্যের মাধ্যমে। দুঃখজনক হলেও সত্য, শাকিল রেজা ইফতির সঙ্গে দেখা হওয়ার আগ পর্যন্ত বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে আমার জ্ঞান ছিল একেবারেই ভাসা ভাসা। কিন্তু ইফতির সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়ার পর বনফুলের মতো লেখকদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। বিশেষ করে বনফুলের ছোটগল্পগুলো আমার খুব পছন্দ। বনফুল শব্দের অর্থ ‘বুনো বা জংলি ফুল’, এই তথ্য আমার খুব ভালো লেগেছে। তার গল্পের ভাবার্থের সঙ্গে আমি একপ্রকার আত্মিক যোগ অনুভব করি। আমি মনে করি, সাহিত্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এই ভাব বা স্পিরিট, যা শিল্পীর সঙ্গে আমাদের আত্মিক বন্ধন স্থাপন করে শিল্পীর কাজগুলোর প্রতি আমাদের মনে ভালোবাসা সঞ্চার করে।
বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎ হয় ‘ঞধমড়ত্ব’ নামটির মাধ্যমে। পরে জানতে পারি, তিনি বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লেখক। আমার এক বন্ধু হাই স্কুলে রবীন্দ্রনাথের বই পড়েছিল, সেখান থেকে আমি এই মহান সাহিত্যিক সম্পর্কে জানতে পারি। দুর্ভাগ্যবশত, এই পরিচিতি হাই স্কুলের পরে খুব বেশি দূর এগোয়নি। তবু রবি ঠাকুর সম্ভবত তুরস্কের পাশাপাশি গোটা বিশ্বে সবচেয়ে সুপরিচিত বাঙালি লেখক ছিলেন। কারণ যে ব্যক্তি তাঁর কবিতা তুর্কি ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন, তিনি আর কেউ নন, মানবতাবাদী ও সর্বজনীন দর্শনে বিশ্বাসী বুলেন্ত এজেভিত, আমাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রীদের একজন।
আসা যাক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রসঙ্গে। অন্যান্য তুর্কির মতো আমি তাঁকে চিনতাম আংকারার একটি রাস্তার কারণে, যেটি বঙ্গবন্ধুর নামে নামকরণ হয়েছিল। বাংলা সাহিত্য এবং শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আমার যোগাযোগের সূত্রপাত শাকিল রেজা ইফতির মাধ্যমে। আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি, নির্মলেন্দু গুণের ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি আমাদের কীভাবে হলো’ শিরোনামের কবিতা নিয়ে। কবিতাটি ছিল শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে, যাঁকে বাংলাদেশের আতাতুর্ক বা স্বাধীনতাসংগ্রামের নেতা বলা হয়। এত গুরুত্বপূর্ণ একটি কবিতা অনুবাদ করতে পারাটা আমার জন্য খুবই আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম, এই সংগ্রামে শেখ মুজিবুর রহমানের গুরুত্ব, তাঁর সাহসী ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে অনেক নতুন এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পেরেছি। কবিতাটি অনুবাদ করার সময় আমি যে চেতনা অনুভব করেছি, তা আমাকে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও সাহিত্যকে আরো ভালোভাবে জানতে উদ্বুদ্ধ করেছে। এই চেতনা ছিল স্বাধীনতার চেতনা, কবিতার চেতনা...
আমাকে যদি কেউ প্রশ্ন করেন, আমি বিনয়ের সঙ্গে বলব যে শাকিল রেজা ইফতির সঙ্গে করা আমার এই অনুবাদ সফল হয়েছে কেবল এই জন্য যে আমরা এই চেতনাকে ধারণ করতে পেরেছি। আমি মনে করি, অনুবাদ কোনো মূল লেখার চেতনাকে সম্পূর্ণরূপে প্রতিফলিত করতে পারে না, যদি না দুই ভাষারই একজন করে স্থানীয় ভাষাভাষী থাকে এর দুই প্রান্তে। আমি আর রেজা যখন এই অনুবাদ করছিলাম, আমি কবিতাটি ইংরেজি থেকে তুর্কিতে অনুবাদ করার পর সে আমাকে কবিতাটির পরিবেশ, প্রেক্ষাপট এবং মর্মের কথা বলেছিল। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের) জনগণকে যা বোঝাতে চেয়েছিলেন সেই দিন, সেই চত্বরে, সেই আপামর জনতার অনুভূতি; সংক্ষেপে বললে, কবিতাটির ভাবার্থ ব্যাখ্যা করে আমাকে বলেছিল শাকিল। আমি অনুভব করছিলাম, যেন আমি নিজেও সেখানে উপস্থিত লোকেদেরই একজন। আমি মনে করি যে অনুবাদ করার সময় একদম আক্ষরিক অর্থে সঠিক শব্দ বসালেও কোনো চেতনা এবং আবেগকে বোঝানোর জন্য তা যথেষ্ট নয়। এই কারণে, আমি বলতে পারি যে অনুবাদটি তুর্কি এবং বাংলা, দুই ভাষারই স্থানীয় লোকজনের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণের মধ্য দিয়ে করা হয়েছিল, অর্থাৎ নিশ্চিত করে বলা যায় যে কবিতাটি তার সঠিক অর্থ পৌঁছে দিতে পেরেছে পাঠকের কাছে।
যেমনটি আগেই উল্লেখ করেছি, এ পর্যন্ত তুর্কি ভাষায় অনুবাদ করা বাংলা সাহিত্যের বেশির ভাগ লেখাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো ‘গীতাঞ্জলি’, যা তুর্কি ভাষায় ‘ইলাহিলার (গান)’ নাম দিয়ে অনুবাদ করেছিলেন বুলেন্ত এজেভিত, যার প্রথম সংস্করণটি বেশ পুরনো, সেই ১৯৪১ সালের। তবে এটিই প্রথম নয়, আমি যত দূর উদ্ধার করতে পেরেছি, প্রথম অনুবাদগুলো ১৯২০-এর দশকের শেষ দিকে ওসমানীয় তুর্কি ভাষায় শুরু হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৯১৬ সালের উপন্যাস ‘ঘরে বাইরে’ ‘বেদরি তাহির ইয়ুর্ত ভে দুনিয়া’ নামে ইংরেজি থেকে তুর্কি ভাষায় অনুবাদ করেন। এটি ১৯২৮ সালে ওসমানীয় তুর্কি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৩০-এর দশক থেকে প্রথমাংশে রবি ঠাকুরের অনেক কাজ ইব্রাহিম হোয়ি ও মেহমেত সুকরু এরদেম তুর্কি ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন। ইব্রাহিম হোয়ি শুধু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থই তুর্কি ভাষায় অনুবাদ করেননি, ত্রিশ-চল্লিশের দশকের গোড়ার দিকে তাঁর ‘ঞযব ধেত্ফবহবৎ’, ‘ঋত্ঁরঃ ধেঃযবত্রহম’, ‘ঞযব ঈত্বংপবহঃ গড়ড়হ’ এবং ‘ক্ষুধিত পাষাণ’-এর মতো বইগুলোও অনুবাদ করেছিলেন। পরে, বিশেষ করে ‘গীতাঞ্জলি’ তুর্কি ভাষায় বিভিন্ন অনুবাদক অনুবাদ করেছিলেন এবং এই অনুবাদগুলো বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রকাশ করা হয়। বুলেন্ত এজেভিত অনূদিত ‘গীতাঞ্জলি’ প্রকাশিত হয়েছে ২০২১ সালে।
তবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্য ছাড়া বাংলা থেকে তুর্কি ভাষায় অনূদিত লেখক ও রচনার সংখ্যা নগণ্য। আমার মতে, তুরস্কে বাঙালি সংস্কৃতিকে আরো বেশি করে তুলে ধরা সম্ভব মূলত শিল্পের মাধ্যমে। উদাহরণস্বরূপ, আমি বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংগীত ব্যক্তিত্ব রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার সঙ্গে দেখা করেছি। তুরস্কে বাংলাদেশ মিশন কর্তৃক আয়োজিত বাংলা নববর্ষের একটি অনুষ্ঠানে তাঁর কণ্ঠে গান শুনে মুগ্ধ হয়েছি। আমি মনে করি, তাঁর মতো সাংস্কৃতিক দূতদের মাধ্যমে বাংলাদেশের শিল্পকে আরো বেশি প্রচার করা উচিত। বিশেষ করে সাহিত্যের বিভিন্ন উপকরণ তুর্কি ভাষায় অনুবাদ করা উচিত এবং তুর্কি শিল্পপ্রেমীদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তুলে ধরা উচিত। সত্যজিৎ রায়ের মতো সফল চলচ্চিত্র পরিচালক, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বনফুল, কাজী নজরুল ইসলাম, নির্মলেন্দু গুণের মতো কবি ও লেখকদের আরো প্রচার, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার মতো সংগীতজ্ঞ এবং শিক্ষাবিদদের পৃষ্ঠপোষকতা, বাংলাদেশি সংগীত ও চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজন ইত্যাদির মাধ্যমে বাংলাদেশের সংগীত, চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতিকে তুরস্কের জনমানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।
লেখক : গবেষক ও সহকারী অধ্যাপক, বিলেজিক শেখ এদেবালি বিশ্ববিদ্যালয়, তুরস্ক
মূল তুর্কি থেকে ভাষান্তর : মাহবুবা আক্তার
- সত্যি কী আমিরাতের গোল্ডেন ভিসা পাচ্ছেন শাকিব খান?
- হজের জন্য মাহরাম না পেলে নারীদের করণীয় কী?
- রাশিয়ার সাথে সম্ভাব্য সংঘাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে ন্যাটো: মস্কো
- অপসাংবাদিকতা মূল সাংবাদিকতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী
- ট্রেন সুবিধায় আরো এক ধাপ এগিয়ে গেল দক্ষিণবঙ্গ: রেলমন্ত্রী
- ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে আমরা পাপমুক্ত হয়েছি’
- ‘মৎস্যসম্পদ রক্ষার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে হবে’
- উপজেলা নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে যে নির্দেশনা দিল ইসি
- টেনিস খেলাকে জনপ্রিয় করতে কাজ করা হচ্ছে: নৌপ্রতিমন্ত্রী
- ট্রেন সার্ভিসের মাধ্যমে রাজধানীর চাপ কমে আসবে: চিফ হুইপ
- ‘উদ্যোক্তারাই দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক অগ্রগতির কাণ্ডারি’
- তীব্র গরমেও শীতল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস
- চাই না মুক্তিযুদ্ধ চেতনাবিরোধী শক্তি ক্ষমতায় আসুক
- ২০৩০ সালের মধ্যে ৩৫ শতাংশ কার্বণ নিঃসরণ কমাতেই হবে
- খুলেছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
- হাবিপ্রবিতে কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন
- ফুলবাড়ীতে শিক্ষার্থীদের শরবত বিতরণ
- হাকিমপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দুই
- গ্রীষ্মকালে শীতল ত্বক : শসার মাস্ক
- মুসলিম উম্মাহর একাত্মতা ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে ভূমিকা রাখতে পারে
- বাংলাদেশ-গাম্বিয়া জয়েন্ট বিজনেস টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব
- ডর্টমুন্ডের সঙ্গে এক যুগের সম্পর্ক ছিন্ন করছেন এই ফুটবলার
- ব্যাভিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে পুরস্কার পেলেন ‘অভাগী’ মিথিলা
- হজের ক্ষেত্রে শয়তান যেসব ওয়াসওয়াসা দেয়
- মার্কিন বাহিনীর ওপর হামলার পরিকল্পনা ভেস্তে দিলো কুয়েত
- যেসব জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শনিবার বন্ধ থাকবে
- আমাদের কাছে সব প্রার্থী সমান: ইসি রাশেদা
- খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণের আহ্বান প্রধান বিচারপতির
- রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি চায় বাংলাদেশ-গাম্বিয়া
- সাত জেলায় দুপুরের মধ্যেই ঝড়-বৃষ্টির আভাস, নদীবন্দরে সতর্কতা
- সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশ: অর্থমন্ত্রী
- দিনাজপুরের হাকিমপুরের হিলিতে শিক্ষক-কর্মচারী কো-অপারেটিভ ক্রেডিট
- ৬ শতাধিক পটল গাছ উপড়ে ফেলল দুর্বৃত্তরা, দিশেহারা কৃষক
- রাণীশংকৈলে ভুট্টাক্ষেত থেকে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার
- বীরগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
- বীরগঞ্জে হবিবর রহমান স্মৃতি রোগ প্রতিরোধ গবেষণা কেন্দ্র উদ্বোধন
- ইস্তিসকার নামাজের সময় ও বিধি-বিধান
- ঈদের দিন বন্ধ থাকবে আন্তঃনগর ট্রেন
- গোর-এ-শহীদ ময়দানে ৬ লাখ মুসল্লির নামাজ আদায়
- টানা ৬ দিন বন্ধের পর হিলি স্থলবন্দরে আমদানি-রফতানি শুরু
- দিনাজপুর জেলা ছাত্রলীগের ৫০০ বৃক্ষের চারা বিতরণ-রোপণ
- জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান
- দিনাজপুরে হলিল্যান্ড কলেজে ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
- রাইমা সেন কেনো হুমকি!
- দিনাজপুরে অনাবৃষ্টি আর দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে লিচুর মুকুল
- দাঁতের যন্ত্রণায় আইসক্রিম খেতে পারছেন না?
- ঘোড়াঘাটে ঐতিহাসিক মুজিব নগর দিবস পালিত
- রূপপুরে নতুন বিদ্যুৎ লাইন চালু মঙ্গলবার
- দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ, পথেই ঝরল ২ প্রাণ
- রংপুরে ইসতিসকার নামাজ আদায়