• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্ডার ছাড়া মেলে না ‘টুরু মুদির রসগোল্লা’

প্রকাশিত: ২ নভেম্বর ২০২২  

রসে টুইটুম্বর রসগোল্লা। হাতের আলতো চাপে চুইয়ে পড়ে রস। এক নামেই পরিচিত টুরু মুদির রসগোল্লা। তবে সুনাম কুড়ানো এই রসগোল্লা চাইলেই কিনতে পাওয়া যায় না। খেতে হলে দিতে হয় অগ্রিম অর্ডার।

দীর্ঘদিন থেকে স্বাদে ভরপুর এই রসগোল্লা তৈরি করে আসছেন শিরিন বেগম নামে এক নারী। তিনি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট পৌর এলাকার কালিতলা গ্রামের বাসিন্দা। তার স্বামী অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য। ১৯৯৫ সাল থেকে নিজ বাড়িতেই তিনি তৈরি করে আসছেন এই রসগোল্লা।

ঘোড়াঘাট সহ আশপাশের বেশ কয়েকটি উপজেলায় সুনাম রয়েছে এই রসগোল্লার। দুধ সংগ্রহ থেকে শুরু করে মিষ্টি বিক্রি সবই হয় শিরিনের নিজ বাড়িতে। টুরুর রসগোল্লা খেতে হলে একদিন অথবা দুদিন আগে দিতে হয় অর্ডার। তাই প্রতিদিন শিরিন বেগমের বাড়িতে রসগোল্লা কিনতে ও অর্ডার দিতে ভীড় করে মানুষ।

প্রতিদিন বিকেলে শিরিন বেগম তার নিজ বাড়ির সামনে বসে ভেজালমুক্ত গাভীর দুধ সংগ্রহ করে। এর পর দুধের ছানা থেকে রসগোল্লা তৈরি, সবই তার হাতের ছোঁয়ায় রসে ভরপুর রসগোল্লাতে রুপ পায়। নিজ বাড়ি থেকে প্রতিদিন তিনি ১০ থেকে ১৫ কেজি মিষ্টি বিক্রি করেন। ঈদ, পুজা ও বিয়ের মৌসুমে বিক্রি হয় কয়েক মণ রসগোল্লা।

এসব রসগোল্লা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা কেজি দরে। এখন থেকে কয়েকমাস আগে তিনি বিক্রি করছেন ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকা প্রতি কেজি। গোল্লা তৈরির উপকরণের দাম বৃদ্ধির কারণে বেড়েছে রসগোল্লার দাম। প্রতি কেজিতে ১৩ থেকে ১৪ পিছ রসগোল্লা উঠে। তার একটি রসগোল্লা বিক্রি হয় ১৫ টাকায়।

শিরিন বেগমের দাদা শুরু করেছিলেন এই রসগোল্লার ব্যবসা। দাদার মৃত্যুর পর হাল ধরেন তার বাবা আব্দুল করিম টুরু। সেই থেকে এই রসগোল্লার নাম টুরু মুদির রসগোল্লা। শিরিনের মা অসুস্থ হওয়ায় ১৯৯৫ সাল থেকে শিরিন তার বাবাকে রসগোল্লা বানানোর কাজে সহযোগীতা করত। ২০১৩ সালে তার বাবা মারা যায়। সেই থেকে বাপ-দাদার তৈরি করে আসা বিখ্যাত এই রসগোল্লা তৈরি করছেন শিরিন বেগম নিজেই।

এই রসগোল্লার ব্যবসা করে ভাগ্য ফিরেছে শিরিনের। নিজেই ধরেছেন পুরো পরিবারের হাল। সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা। রসগোল্লার ব্যবসা করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র করে টাকা জমিয়েছিলেন তিনি। সেই টাকা দিয়ে তৈরি করেছেন নিজের স্বপ্নের বাড়ি।

সোমবার শিরিনের বাড়িতে গেলে দেখা মেলে কুদ্দুস মোল্লা নামে ৫৭ বছর বয়সী এক বৃদ্ধের। তিনি পাশ্ববর্তী গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বড়গাঁও গ্রামের বাসিন্দা। রসগোল্লা কিনতে এসেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ের বিয়ে। গত দু‘দিন আগে ২০ কেজি মিষ্টির অর্ডার দিয়েছিলাম। আজ নিতে এসছি। আমার বাপও করিম টুরুর কাছে থেকে গোল্লা নিয়ে যেত। এই রকম অরজিনাল রসগোল্লা এখন আর পাওয়া যায় টুরুর গোল্লা ছাড়া।’

মিষ্টি খেতে এসেছিলেন কলেজ পড়ুয়া কয়েকজন যুবক। কথা হয় শিহাব সালমান নামে একজনের সাথে। সে বলে, ‘আমার বাড়ি ঘোড়াঘাটেই। পড়াশুনা করি বাহিরে। ছুটিতে বাড়িতে এসেছি। তাই বন্ধুদেরকে নিয়ে মিষ্টি খেতে আসলাম। ১ কেজি কিনতে চাইলাম। কিন্তু পেলাম না। অবশেষে সবাই একটি করে মিষ্টি খেয়ে ফিরে যাচ্ছি।’

রসগোল্লা বিক্রি করে সফল হওয়া নারী শিরিন বেগম বলেন, ‘মা অসুস্থ হওয়ার পর আমি বাবার কাজে সহযোগীতা করতাম। তখনই এই মিষ্টি বানানো শিখে যাই। বাবা মারা যাওয়ার পর আমি ব্যবসার হাল ধরেছি। এই ব্যবসার উপর দিয়ে আমার পুরো পরিবার অনায়াসে চলছে। সন্তানের পড়াশুনার খরচও আমি জোগাচ্ছি। চাহিদার কারণে খুচরা বিক্রি তেমন সম্ভব হয়না। অর্ডার দিলে চাহিদা মত গোল্লা বানিয়ে তা সরবরাহ করি। প্রায় প্রতিদিনই গোল্লার অর্ডার আসে আমার কাছে।’

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –