• মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সহিংসতা বাড়ছে

প্রকাশিত: ৩১ মার্চ ২০২৪  

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে বন্দুকযুদ্ধ, অপহরণ ও হত্যাকাণ্ড ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। সশস্ত্র গোষ্ঠী ও অপরাধী চক্র দিনদিন আরো সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা মুক্তভাবে ইবাদত করতে পারতো না। কর্তৃপক্ষ তাদের অস্তিত্ব অস্বীকার করে তাদের ঐতিহাসিক সম্প্রদায়ের প্রমাণগুলোকে ধ্বংস করেছে। তারপর তাদের উপর আসে জাতিগত নির্মূলের অভিযান, যা তাদের অন্য দেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে। যেখানে তারা বাঁশ ও তার দিয়ে আশ্রয় তৈরি করে।

এক মিলিয়ন রোহিঙ্গা কক্সবাজার শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে, যারা বাংলাদেশের জন্য নতুন নতুন হুমকির সৃষ্টি করছে। সশস্ত্র রোহিঙ্গা গোষ্ঠী ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত অপরাধী দলগুলো শিবিরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তারা আরো সহিংস হয়ে উঠেছে এবং  ক্যাম্পেগুলোকে  নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রকাশ্য দিবালোকে বন্দুকযুদ্ধে জড়াচ্ছে।

ক্রমবর্ধমান সহিংসতা শিবিরগুলোতে অভিশাপ হয়ে উঠেছে। ক্যাম্পে কর্মরত চিকিৎসকরা বলছেন, গত এক বছরে গোলাগুলিতে আহতদের চিকিৎসায় চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা গেছে, শিবিরে হত্যার সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে ও অপহরণ বেড়েছে চারগুণ।

বাংলাদেশে শরণার্থী বিষয়ক জাতিসংঘের হাইকমিশনারের প্রতিনিধি সুম্বুল রিজভী বলেন, শিবিরে নিরাপত্তা এখন আমাদের এক নম্বর উদ্বেগের বিষয়। সংস্থার গণনা অনুসারে, সহিংসতার ঘটনা গত বছরের তুলনায় তিনগুণ বেড়েছে, যা আরো বেশি সংখ্যক রোহিঙ্গাকে শিবির থেকে নৌকায় করে পালানোর জন্য প্ররোচিত করেছে।

এদিকে, ক্যাম্পের বাসিন্দারা ব্যাপকভাবে স্থানীয় পুলিশকে অকার্যকর বলে অভিযুক্ত করেছেন। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা কক্সবাজার পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আবদুল্লাহিল বাকী বলেন, নিরাপত্তা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু সেই মূল্যায়ন শিবিরের পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

১২ জনের বেশি শরণার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেউ কেউ দুটি দলের নাম উচ্চারণ করতে ভয় পান। তারা বলছে, গোষ্ঠীর সদস্যরা তাদের কাছে নেই এমন অর্থের জন্য তাদের মারধর করে, হত্যা করে, অপহরণ করে, ধর্ষণ করে এবং চাঁদাবাজি করে।

যদিও সশস্ত্র গোষ্ঠীর সংখ্যা নির্ণয় করা কঠিন। বিশ্লেষকদের ধারনা, ক্যাম্পে এখন ৫ থেকে ১৫টির কম বা বেশি সুসংগঠিত গ্রুপ এসব কর্মকাণ্ডে লিপ্ত।

মানবাধিকার সংস্থা ফর্টিফাই রাইটস বলছে, বাংলাদেশি মিডিয়ায় তার প্রতিবেদনের গণনা অনুসারে, শিবিরে হত্যার সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ২০২৩ সালে দ্বিগুণ হয়ে ৯০-এর বেশি হয়েছে। ২০২৩ সালের প্রথম আট মাসে ডক্টরস উইদাউট বর্ডার দ্বারা চিকিৎসা করা বন্দুকের গুলিতে আহতের সংখ্যা এরই মধ্যে ২০২২ থেকে দ্বিগুণ হয়েছে।

ক্যাম্পে রোহিঙ্গা নারীরা বলেন, বন্দুকধারীরা তাদের রক্ষণশীল মুসলিম আদর্শ তাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। তাদের রক্ষণশীল পোশাক পরতে এবং কাজ না করার জন্য চাপ দিয়েছে।

নিরাপত্তার ভয়ে পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে এক মানবাধিকারকর্মী বলেন, ক্যাম্পে তার মানবাধিকারের কাজ বন্ধ করার জন্য তাকে বেশ কয়েকবার সতর্ক করা হয়েছিল। তারপর তার পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা করা হয়। সে সময় তার ভাই গুলিবিদ্ধ হন এবং তার বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হামলাকারীরা তখন বলেন, যতদিন বাংলাদেশ আমাদের আশ্রয় দিচ্ছে, ততদিন আমাদের আইন মেনে চলতে হবে।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –