• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

আত্রাইয়ের চরে সবুজের সমারহ

প্রকাশিত: ২৭ মার্চ ২০২১  

অন্যোর জায়গায় ছোট পরিসরে দুটো ছোট ছোট ঘরে তৈরী করে স্ত্রী এক ছেলে আর এম মেয়ে নিয়ে বসবাস করতেন মোহাম্মদ আলম শেখ।দিনমজুর, অন্যের জমিতে কাজ করেই চলে সংসার। তবে সংসার চললেও সঞ্চয় বলতে কিছুই নেই। একদিন অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের অন্য সদস্যদের অনেক কষ্ট করে দিনটি চালাতে হয় । ছেলেমেয়েরা বড় হচ্ছে। 

একদিন বাড়ি থেকে অভিমান করে হেঁটে আত্রাই নদীর জয়গঞ্জ ঘাটের তীরে বিশাল চরের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ করেই তার মনে হলো এই বিশাল বালুর চরে যদি কিছু একটা করা যায় তবেই আমাদের ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন হতে পারে। 

সেই চিন্তা থেকেই দিনাজপুরের বীরগঞ্জের ঝাড়বাড়ী নামা বনদিয়া পাড়ার জসিম উদ্দীনের ছেলে আলম শেখ তিন বছর ধরে তার চিন্তা চেতনার বাস্তবায়নে কাজ করছেন। আত্রাই নদীর জয়গঞ্জ ঘাটের পশ্চিম পাড়ে ৭ একর বালুর চরে এখন সে মিষ্টি কুমড়া আর লাউ চাষ করছেন।  এক সময়ে ধু ধু বালুর চর এখন সবুজের সমারোহ আর মিষ্টি কুমড়া , লাউ , রসুন , পেয়াজ , কাচা মরিচ , ভুট্টার আবাদ হওয়ায় আলম শেখের মত অনেক ভূমিহীন চাষীর ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে । 

সেই বিশাল বালুর চরে এখন থোকায় থোকায় মিষ্টির কুমড়ার হলুদ হলুদ ফুল, মিষ্টি কুমড়া, লাউ গাছের সাদা সাদা ফুল আর লাউ । এ সব সবজির ফলনে আলম শেখ ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। ছেলেমেয়েদেরকে লেখাপড়া শিখিয়ে  দেশের বড় কর্মকর্তার বানানোর  স্বপ্নও এখন তাদের চোখে।  

চাষী মোহাম্মদ  আলম শেখ জানান,  বর্ষার সময় আত্রাই নদীর দুই পার পানিতে থৈ থৈ করে। পানি নেমে যাওয়ার পর নভেম্বরের শুরুর দিকে এই বিশাল বালুচরের মিষ্টি কুমড়া আর লাউ গাছ  লাগানোর জন্য বড় বড় গর্ত করতে হয় । সেই গর্তের মধ্যে দোআঁশ মাটি আর গোবর সার এবং  কিছু রাসায়নিক সার মিশিয়ে মিষ্টি কুমড়া আর লাউ এর বীজ বোপন করতে হয়। 

সেই কুমড়ার বীজ থেকে আস্তে আস্তে চারা গাছগুলো বড় হতে থাকে। ফেব্রুয়ারি থেকে সেই  মিষ্টি কুমড়া আর লাউয়ের ফলন আসতে শুরু করে। মার্চ থেকেই লাউ আর এপ্রিল মাসের শুরু থেকেই মিষ্টি কুমড়া পেকে যায়। লাউ স্থানীয় পাইকারদের নিকট বিক্রি করা হলেও মিষ্টি কুমড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বড় বড় মিষ্টি কুমড়া ব্যবসায়ীরা ক্রয় করতে আসেন। সেই মিষ্টি কুমড়া ব্যবসায়ীরা ট্রাক ভর্তি করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠান। এই মিষ্টি কুমড়া এবং লাউ আবাদ করতে ৭ একর বিশাল চর এর মধ্যে ১ হাজার ৭ শত গর্ত খোঁড়া হয়েছে। 

মিষ্টি কুমড়ার গাছ লাগানোর পর থেকে মিষ্টি কুমড়া বাজারজাতকরণ পর্যন্ত দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়। সব বাদ দিয়ে প্রায় প্রতি বছর ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা লাভ হয় । 

একইভাবে শেখ আলমের ভাবি আলেয়া বেগম জানান, তিনিও ভূমিহীন। স্বামী আছে, সংসার আছে, ছেলে মেয়ে আছে। স্বামীর সঙ্গে তিনিও এই বিশাল বালুচরে তিন একর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ ও লাউয়ের চাষ করে তিনিও স্বাবলম্বী হয়েছে।

তিনি বলেন, মিষ্টি কুমড়ার চাষাবাদ করতে পানি সেচ ছাড়া তেমন বেশি একটা খরচ হয় না। তবে প্রায় এক মাস আগে থেকেই প্রতিদিন স্থানীয় বাজারে পাইকারিভাবে প্রতিটি লাউ ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি করছেন। প্রতিদিন ২০০ থেকে ৪০০ লাউ বাজারে বিক্রি করতে পারছেন। এতে প্রতিদিন প্রায় ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ করে এই আবাদ করলেও ঋণ পরিশোধ করে বছরে প্রায় দুই থেকে তিন লাখ টাকা আয় হচ্ছে। 

স্থানীয় ইসমাইল হোসেন জানান, এক সময়ের  ধুধু বালুচর এখন সবুজের সমারোহ, যেদিকে তাকানো যায় চিকচিক সাদার মধ্যে বালুর মধ্যে এখন সবুজের সমারোহ। পাশাপাশি গৃহহীন ভূমিহীন মানুষেরা অনেকটাই স্বাবলম্বী। এই জয়গঞ্জ আত্রাই নদীর চরের বুকে সবুজের ক্ষেত। দূর থেকে দেখেই ভাল লাগছে ভূমিহীন চাষীরা নিজের ভাগ্য নিজেরাই পরিবর্তন করছে। 

তিনি বলেন, একসময় মনে হত আত্রাই নদী আমাদের জন্য অভিশাপ । এখন মনে হচ্ছে আত্রাই নদীর সুবিশাল বালুর চর আমাদের গ্রামের ভূমিহীন চাষীদের জন্য আশীর্বাদের শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছে। সেই বালুচরের মধ্যেই এখন সোনা ফলতেছে। কিছু ভূমিহীনদের কর্মসংস্থানের জায়গা তৈরি হয়েছে। ভূমিহীন কৃষকেরা সমবায়ের ভিত্তিতে একে অপরের জমিতে একে অপরের বালুচরের কাজ করে ভাগ্যের পরিবর্তন শুরু হয়েছে।  সামগ্রিকভাবে দেশের এবং জাতির উন্নয়নের চাবিকাঠি বলে আমি মনে করি  । 

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক তৌহিদুল ইকবাল বলেন, আমাদের শুকনো মৌসুমে অনেক বড় বড় নদীতে চর জেগে উঠে। জেলার উপর দিয়ে আত্রাই নদীর প্রবাহিত হয়ে কয়েকটি উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহমান। জয়গঞ্জ আত্রাই নদীর ঘাটের অনেক চর পড়ে আছে। সেই আত্রাই চরকে কাছে লাগিয়ে স্থানীয় কৃষকেরা চাষাবাদের আওতায় নিয়ে এসেছে। এটা নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য সুখবর।  

তিনি আরো বলেন, আমাদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ওই সব চাষীদেরকে আমরা বিআরটিএ মাধ্যমে রবি শষ্য উৎপাদনের জন্য ভাল মানের বীজ সরবরাহ করে আরো উৎসাহ প্রদান করবো।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –