• রোববার ০৫ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২২ ১৪৩১

  • || ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

কুড়িগ্রামে মহান মুক্তিযুদ্ধে ৬নং সেক্টরের ১ম শহীদের কবরে শ্রদ্ধা

প্রকাশিত: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯  

কুড়িগ্রামে মহান মুক্তিযুদ্ধে ৬ নং সেক্টরের প্রথম শহীদ লুৎফর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন ও দোয়া পাঠ হয়েছে। 

ফুলবাড়ী উপজেলার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে সংরক্ষিত তার কবরে সোমবার সকালে শ্রদ্ধা ও পুষ্পার্ঘ অর্পণ করেন ফুলবাড়ীর ইউএনও মাছুমা আরেফিন, উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী সরকার, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মজিবর রহমান, পুলিশ বিভাগ, উপজেলা আওয়ামী লীগ, ফুলবাড়ী সাহিত্য পরিষদ, প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকরা, বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তারা ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।

মুক্তিযুদ্ধে বর্বর হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সারা দেশের মতো কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী এলাকার দেশ প্রেমিক বাঙালিরা সোচ্চার হতে থাকে। ১৯৭১ সালে ২৮ মার্চ ভূরুঙ্গামারীর জয়মনি থেকে আসা একদল পাক হানাদার ফুলবাড়ীতে প্রবেশ করলে ফুলবাড়ীর কৃতি সন্তান সাহসী পুরুষ মুক্তিযুদ্ধের সফল সংগঠক বীর প্রতীক বদরুজ্জামান মিয়ার নেতৃত্বে সংগঠিত হয়ে শহীদ লুৎফর রহমানসহ প্রায় অর্ধশত মুক্তিযোদ্ধার একটি দল হানাদারদের পরাস্ত করার জন্য তাদের পিছু নেয়। 

মুক্তিযোদ্ধারা ফায়ারিং পজিশন নিতে গেলে রাস্তায় সাধারণ মানুষের কারণে গুলি করতে পারেনি। পরে ফুলবাড়ী থেকে ধরলা নদীর কুলাঘাট পার হয়ে লালমনিরহাট সদরের নেছারিয়া মাদরাসা সংলগ্ন এলাকায় পাক হানাদার দলটি পৌঁছালে সেখানেই পজিশন অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ শুরু করেন। এই যুদ্ধটিই ৬ নং সেক্টরের প্রথম যুদ্ধ। 

এই ৬ নং সেক্টরের প্রথম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হলেন শহীদ লুৎফর রহমান। এই যুদ্ধে অংশগ্রহণের আগে লুৎফর রহমান ফুলবাড়ীর গংগারহাট ক্যাম্পে ইপিআরের হাবিলদার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। 

৬ নং সেক্টরের প্রথম এই বীর শহীদ লালমনিরহাট নেছারিয়া মাদরাসা সংলগ্ন এলাকায় সম্মুখ যুদ্ধে সাথী মুক্তি যোদ্ধাদের কাছ থেকে গুলি চাওয়ার জন্য মাথা উঁচু করলে পাক হানাদারের ছোঁড়া একটি গুলি তার মাথা ভেদ করে। সেখানেই শহীদ হন লুৎফর রহমান। 

মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমানের জীবনদানের মধ্য দিয়ে পরবর্তীতে ৬ নং সেক্টরের অধীনস্থ ফুলবাড়ীর মুক্তিযোদ্ধারা দুর্বার হয়ে ওঠেন। ধ্বংস করেন পাক হানাদারের ঘাঁটি। ফুলবাড়ীকে করেন শত্রু মুক্ত। শহীদ লুৎফর রহমানের নামে ফুলবাড়ী সদর থেকে ফুলসাগর পর্যন্ত একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে শহীদ লুৎফর রহমান স্মরণি।  

১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস, ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারি আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসে এই শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে ফুলবাড়ীবাসী শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে তার কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও কবর জিয়ারত করে আসছে। 

মুক্তিযোদ্ধা শহীদ লুৎফর রহমানের পারিবারিক ঠিকানা ও তার পরিবার বর্গের খোঁজ পাওয়ার জন্য সাংবাদিক ইউনুছ আলী আনন্দ প্রেরিত দাবি সংবিলত একটি স্মারকলিপি মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালায়সহ বিভিন্ন দফতরে পাঠানো হলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এর সদর দফতর ঢাকার পিলখানা থেকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমানের পারিবারিক ঠিকানা ও পরিবারের খোঁজ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

পিলখানা থেকে পাওয়া তথ্য ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শহীদ লুৎফর রহমানের বাড়ি নোয়াখালী জেলার সোনইমুড়ি উপজেলার বজরা ইউপির বজরা গ্রামে। 

সেখানে শহীদ লুৎফর রহমানের স্ত্রী আমেনা বেগম (৭৬), তার একমাত্র ছেলে সৌদি প্রবাসী মতিউর রহমান, নাতি মিতুল, সিতুল, নাতনি মোহিনী ও মিতিলাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা বসবাস করছেন।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –