• মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

খানসামায় মাঠে মাঠে বাতাসে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন

প্রকাশিত: ১০ অক্টোবর ২০২৩  

 
গ্রামীণ জনপদে দিগন্তবিস্তৃত ফসলের মাঠ। মাঠে মাঠে সোনালী ধানের সমারোহ। বাতাসে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। কেউ আবার আগাম ঘরে তুলছে সোনালী ধান। 

গ্রামীণ জনজীবনে নবান্ন উৎসব যেন এখন শুধুই স্মৃতি। হেমন্তকালে মাঠে মাঠে দেখা যায় দিগন্তবিস্তৃত সোনালি ধানের ক্ষেত। হেমন্তে বাংলার গ্রাম হেমবরণী। কমলা রোদে উজ্জ্বল সোনালি ধানের গুচ্ছ। এ সময় ধান সোনালি রঙ ধারণ করে। পাকা ধানের সোনালি রঙ দেখে কৃষকের মন আনন্দে ভরে যায়। এ ঋতু মমতাময়ী জননীর মতো কৃষকের গোলা ভরে দেয় সোনালি ধানে। হৈমন্তী ধানের মিষ্টি গন্ধে আমোদিত হয় চারদিক। ঢেঁকির তালে আর ধান ভানার গানে নবান্নের উৎসবে মেতে ওঠে গ্রামবাসী। গ্রাম-বাংলায় থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাঙ্গালী জাতির হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী এবং সবচেয়ে প্রাচীনতম উৎসব নবান্ন। নবান্ন উৎসবকে মনে করা হতো অসাম্প্রদায়িক উৎসব। হেমন্ত ঋতুতে অর্থাৎ অগ্রহায়ণ মাসে কৃষকের নতুন বার্তা নিয়ে আমন ধানের আগমন।

হেমন্তকালে এ উৎসব ছিল সার্বজনীন। নবান্ন ঘিরে (নতুন ধান ঘরে তোলা উৎসব) গ্রামে গ্রামে চলত পিঠা-পুলি ও খির-পায়েশের উৎসব। হেমন্তে ধান কাটা উৎসবে যোগ হতো সারি সারি গরু ও মহিষের গাড়ি। মাঠে মাঠে কৃষকরা দল বেধে ধান কাটা উৎসবে যোগ দিতেন। আর গেয়ে উঠতেন জারি-সারি ভাটিয়ালিসহ নানা ধরনের গান। এক কোথায় গ্রামীণ জীবনে হেমন্তের আবহ ছিল অন্তপ্রাণে গাঁথা।

কৃষকের উৎপাদিত সোনালি ধানের সোনালি দিন। এ উৎসব বাঙালি জাতিকে ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ করে অথচ আজকের গ্রাম-বাংলার শিশুরা যেন স্বপ্নের মধ্যে নবান্নের উৎসবের ইতিকথা বাবা-মা কিংবা দাদা-দাদীর মুখে মুখে শুনে বিশেষ করে বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি জড়িয়ে আছে এই নবান্ন উৎসবে। অগ্রহায়ণ মাস এলেই গ্রাম-বাংলায় বোঝা যেত যে নবান্ন আসছে। গ্রাম-বাংলায় বসত পালাগান, লোকনাট্য, কেচ্ছা-কাহিনী, ভাওয়াইয়া গান, লালনগীতি ও বাউল গানের আসর। নাচ আর গানে মুখরিত হতো গ্রাম বাংলার বিভিন্ন অঞ্চল। বাংলাদেশে বর্তমান পালাগান আর বাউল গানের আসর বিপন্ন প্রায়। অপসংস্কৃতি, ফেসবুক, ইউটিউব ও ধর্মীয় প্রচারের নামে নারীদের ভোগপিপাসা অথবা পণ্যের সঙ্গে করা হচ্ছে তুলনা।  আর তেমন চোখে পড়ে না, নবান্ন উৎসবের সেই নতুন ধানের আলো চাল ও সেই চালের আটা দিয়ে মুড়ি-মুড়কি, খৈ, পাটিসাপ্টা, ভাপা পিঠা, পায়েশসহ নানা ধরনের পিঠার আয়োজন। তবে বর্তমানে আমনের জায়গা দখল করেছে আউশ-আমন-বোরো ধান। বিভিন্ন জাতের উচ্চ ফলনশীল ধান বাজারে আসায় নতুন ধানের গন্ধ হারিয়ে যাচ্ছে এবং স্বল্প সময়ে ওইসব ধান উৎপন্ন হওয়ায় গ্রামবাংলার ঐত্যিবাহী নবান্ন উৎসব হারিয়ে যেতে বসেছে বলেও মনে করেন অনেকে।

উপজেলার ছাতিয়ান গড় গ্রামের বৃদ্ধ আবুল বলেন, আমার বাপ-দাদাদের দেখেছি কার্তিকে অনেক মানুষ না খেয়ে থাকতো। নতুন ধান উঠলে সেই কষ্ট দূর হতো। নতুন ধানের আলো চাল ও সেই চালের আটা দিয়ে মুড়ি-মুড়কি, খৈ, পাটিসাপ্টা, ভাপা পিঠা, পায়েশসহ নানা ধরনের পিঠার আয়োজন হতো। এখন আর হয় না। কিন্তু এখন আর না খেয়ে কাউকে থাকতে দেখি না। সবাই অন্তত তিন বেলা খেতে পারছে। এটা দেখে খুব ভালো লাগে।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –