বাঙালির মুক্তির সনদ
প্রকাশিত: ৭ জুন ২০২২
আব্দুর রহমান
বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা একটি ধারাবাহিক রাজনৈতিক আন্দোলনের ফসল। পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক সামরিক শক্তির দীর্ঘ ২৩ বছরের শাসন, শোষণ ও নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার জাগরণের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত মুক্তির লক্ষ্যে জাতিকে একটি আদর্শিক চেতনায় ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জনের মহান রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৬৬ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান প্রদত্ত ছয় দফা বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ওই বছর ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষে দলের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠায় ৫ ফেব্রুয়ারি ‘ছয় দফা দাবি’ পেশ করেন।
এর চার বছর আগে ১৯৬২ সালের ২৪ জুন যে ৯ জন বাঙালি নেতা পাকিস্তানে সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে বিবৃতি দেন, তাঁদের একজন ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু ছয় দফা পেশ করার মধ্য দিয়ে তিনি একক নেতা হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানকেন্দ্রিক তাঁর নিজ রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থানকে প্রতিভাত করেন। অন্য সব নেতার মতো তাঁর রাজনৈতিক লক্ষ্য শুধু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলার মানুষের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতির চূড়ান্ত স্বাধীনতা হয়ে ওঠে তাঁর রাজনীতির একমাত্র অভীষ্ট লক্ষ্য।
৪ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিব লাহোরে পৌঁছান এবং তাঁর পরদিন অর্থাৎ ৫ ফেব্রুয়ারি তিনি ছয় দফা দাবি পেশ করেন। ৬ ফেব্রুয়ারি পত্রপত্রিকায় শেখ মুজিবকে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হিসেবে চিত্রিত করা হয়। ফলে তিনি ৬ ফেব্রুয়ারির সম্মেলন বর্জন করেন। ছয় দফার জন্য বঙ্গবন্ধু শুধু সরকার ও সরকারি দলের নেতাদের আক্রোশের শিকার হননি, বিরোধীদলীয় নেতাদের দ্বারাও কঠোরভাবে সমালোচিত হন।
ছয় দফা দাবি ঘোষণা করার পর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ শেখ মুজিবুর রহমানকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘আপনি এই যে ছয় দফা দিলেন, এর মূল কথাটি কী?’ উত্তরে আঞ্চলিক ভাষায় শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘আরে মিয়া বুঝলা না? দফা তো একটাই। একটু ঘুরাইয়া কইলাম। ’ লাহোরে পেশ করা ছয় দফা বঙ্গবন্ধুর একটু ঘুরিয়ে বলা এক দফাই হলো বাঙালির মুক্তির দফা, পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন অর্থাৎ বাংলাদেশের স্বাধীনতার দফা।
লাহোর থেকে ঢাকায় ফিরে পরের মাসেই শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। সাধারণ সম্পাদক হন তাজউদ্দীন আহমদ। ১৯৬৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় ছয় দফা প্রস্তাব এবং দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনের কর্মসূচি গৃহীত হয়। শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজউদ্দীন আহমদের ভূমিকা সংবলিত ছয় দফা কর্মসূচির একটি পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়। এর নাম ছিল ‘ছয় দফা : আমাদের বাঁচার দাবি’।
ঢাকায় ফিরে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় ছয় দফা পেশ করলে, সভায় সেটি গৃহীত হয়নি। এমতাবস্থায় ছাত্রলীগের তত্কালীন সভাপতি সৈয়দ মাযহারুল হক বাকী ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাককে ডেকে বাঙালির মুক্তির সনদ হিসেবে সেটি তাঁদের হাতে তুলে দেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা মোতাবেক ছাত্রলীগ ছয় দফাকে সারা দেশের প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে প্রচারণা শুরু করে।
১৮ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ‘আমাদের বাঁচার দাবি : ৬-দফা কর্মসূচি’ শীর্ষক একটি পুস্তিকা প্রকাশ ও প্রচার করা হয়। ২৩ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দফা উত্থাপন করা হয় লাহোর প্রস্তাবের সঙ্গে মিল রেখে। ছয় দফা দাবির মূল উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তান হবে একটি ফেডারেল রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন থাকবে। ছয় দফা কর্মসূচি জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য শেখ মুজিব ও তাঁর সহকর্মীরা সারা দেশে মহকুমায় মহকুমায় ঘুরে বেড়াতে শুরু করলেন।
এই ছয় দফাকে কেন্দ্র করে সারা দেশে গণজাগরণের সৃষ্টি হলো। দৈনিক ইত্তেফাক এই দাবির পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখে। এই কর্মসূচিকে তারা ‘বাঙালির বাঁচার দাবি’ হিসেবে অভিহিত করে। তখন শেখ মুজিব যেখানে যাচ্ছেন, সেখানেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কিন্তু কী ছিল সেই ছয় দফায়—
দফা-১ : শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের প্রকৃতি
লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে সংবিধান রচনা করে পাকিস্তানকে একটি ফেডারেশনে পরিণত করতে হবে, যেখানে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার থাকবে এবং প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের ভোটে নির্বাচিত আইন পরিষদ সার্বভৌম হবে।
দফা-২ : কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা
কেন্দ্রীয় (ফেডারেল) সরকারের ক্ষমতা শুধু দুটি ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে দেশরক্ষা ও বৈদেশিক নীতি। বাকি সব বিষয়ে অঙ্গরাষ্ট্রগুলোর ক্ষমতা থাকবে নিরঙ্কুশ।
দফা-৩ : মুদ্রা বা অর্থ সম্বন্ধীয় ক্ষমতা
মুদ্রার ব্যাপারে নিম্নলিখিত দুটির যেকোনো একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা যেতে পারে—
(ক) সারা দেশের জন্য দুটি পৃথক অথচ অবাধে বিনিময়যোগ্য মুদ্রা চালু থাকবে; অথবা
(খ) বর্তমান নিয়মে সারা দেশের জন্য মাত্র একটি মুদ্রাই চালু থাকতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে শাসনতন্ত্রে এমন ফলপ্রসূ ব্যবস্থা রাখতে হবে, যেন পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে মূলধন পাচারের পথ বন্ধ হয়। এ ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পৃথক ব্যাংকিং রিজার্ভেরও পত্তন করতে হবে এবং পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য পৃথক আর্থিক বা অর্থবিষয়ক নীতি প্রবর্তন করতে হবে।
দফা-৪ : রাজস্ব, কর বা শুল্ক সম্বন্ধীয় ক্ষমতা
ফেডারেশনের অঙ্গরাজ্যগুলোর কর বা শুল্ক নির্ধারণের ব্যাপারে সার্বভৌম ক্ষমতা থাকবে। কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো ধরনের কর নির্ধারণের ক্ষমতা থাকবে না। তবে প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য অঙ্গরাষ্ট্রীয় রাজস্বের একটি অংশ কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাপ্য হবে। অঙ্গরাষ্ট্রগুলোর সব ধরনের করের শতকরা একই হারে আদায় করা অংশ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল গঠিত হবে।
দফা-৫: বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা
ক. ফেডারেশনভুক্ত প্রতিটি রাজ্যের বহির্বাণিজ্যের পৃথক হিসাব রক্ষা করতে হবে;
খ. বহির্বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা অঙ্গরাজ্যগুলোর এখতিয়ারে থাকবে;
গ. কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা সমান হারে অথবা সর্বসম্মত কোনো হারে অঙ্গরাষ্ট্রগুলোই মেটাবে;
ঘ. অঙ্গরাষ্ট্রগুলোর মধ্যে দেশজ দ্রব্য চলাচলের ক্ষেত্রে শুল্ক বা করজাতীয় কোনো ধরনের বাধা-নিষেধ থাকবে না;
ঙ. শাসনতন্ত্রে অঙ্গরাষ্ট্রগুলোকে বিদেশে নিজ বাণিজ্যিক প্রতিনিধি পাঠানো এবং নিজ স্বার্থে বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদনের ক্ষমতা দিতে হবে।
দফা-৬ : আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা
আঞ্চলিক সংহতি ও শাসনতন্ত্র রক্ষার জন্য শাসনতন্ত্রে অঙ্গরাষ্ট্রগুলোকে নিজ কর্তৃত্বে আধাসামরিক বা আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন ও রাখার ক্ষমতা দিতে হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, দলকে চাঙ্গা করা এবং দলের জন্য অপরিহার্য হয়ে ওঠার জন্যও শেখ মুজিবের এই রকম একটি কর্মসূচির প্রয়োজন ছিল।
১৯৬৬ সালের ২ জুলাই প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান বলেন, ‘মানুষের আবেগ প্রবণতা নিয়া খেলা করতে অভ্যস্ত এইরূপ একটি গোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানে গোলযোগ সৃষ্টির প্রচেষ্টা করিয়াছিল। আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দোহাই দিয়া তাহারা এমন একটি কর্মসূচি চালু করতে প্রয়াসী হইয়াছিল, যাহা দেশের বিভিন্ন অংশে কেবলমাত্র ঘৃণা ও বিদ্বেষেরই প্রসার ঘটাইত। ’ তাদের কার্যকলাপ সীমা ছাড়িয়েছে বলে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত এবং জনগণ ভুল পথে পরিচালিত হওয়া হইতে রক্ষা পাইয়াছে। ’
ছয় দফা প্রণয়ন ও উত্থাপনের পেছনে মূল কারণ ছিল মূলত পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক বৈষম্য। তাই ছয় দফা হঠাত্ করেই আসমান থেকে পড়েনি। এর প্রস্তুতি ছিল দীর্ঘদিনের। ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব, ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ, ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্ম, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়, ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসন—এসবই ছয় দফার ভিত তৈরি করেছে। পরবর্তীকালে এই ছয় দফা দাবিকে কেন্দ্র করে বাঙালির স্বায়ত্তশাসনের তথা স্বাধীনতার আন্দোলন জোরদার হয়। বাংলাদেশের জন্য এই আন্দোলন এতই গুরুত্বপূর্ণ যে এই আন্দোলনকে ‘ম্যাগনা কার্টা’ বা ‘বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ’ও বলা হয়।
বঙ্গবন্ধুর ভাষায়, ‘ছয় দফা যে পূর্ব বাংলার প্রাণের দাবি—পশ্চিমা উপনিবেশবাদী ও সাম্রাজ্যবাদীদের দালাল পশ্চিম পাকিস্তানের শোষকশ্রেণি যে আর পূর্ব বাংলার নির্যাতিত গরিব জনসাধারণকে শোষণ বেশি দিন করতে পারবে না, সে কথা আমি এবার জেলে এসেই বুঝতে পেরেছি। বিশেষ করে ৭ জুনের যে প্রতিবাদে বাংলার গ্রামে-গঞ্জে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ফেটে পড়েছে, কোনো শাসকের চক্ষু-রাঙানি তাদের দমাতে পারবে না। পাকিস্তানের মঙ্গলের জন্য শাসকশ্রেণির ছয় দফা মেনে নিয়ে শাসনতন্ত্র তৈয়ার করা উচিত। যে রক্ত আজ আমার দেশের ভাইদের বুক থেকে বেরিয়ে ঢাকার পিচ ঢালা কালো রাস্তা লাল করল, সে রক্ত বৃথা যেতে পারে না। ’ (কারাগারের রোজনামচা, ২রা জুলাই, ১৯৬৬)
১৯৬৬ সালের ৭ জুন ছয় দফা দাবির পক্ষে দেশব্যাপী তীব্র গণ-আন্দোলনের সূচনা হয়। শেখ মুজিবসহ সব রাজবন্দির মুক্তির দাবিতে এই দিন আওয়ামী লীগ সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল ডাকে। হরতালে টঙ্গী, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জে পুলিশ ও ইপিআরের গুলিতে মনু মিয়া, শফিক, শামসুল হক, মুজিবুল হকসহ মোট ১১ জন বাঙালি শহীদ হন। ছয় দফা আন্দোলনের প্রথম শহীদ সিলেটের মনু মিয়া।
শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফাই যে সাড়ে পাঁচ কোটি বাঙালির মনের কথা ছিল, তার চাক্ষুষ প্রমাণ হলো ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বরের নির্বাচন। আওয়ামী লীগে জাতীয় পরিষদে ১৬০টি সাধারণ আসন ও সংরক্ষিত নারী আসন সাতটিসহ মোট ১৬৭টি আসন এবং প্রাদেশিক নির্বাচনে ২৮৮টি সাধারণ আসন ও ১০টি সংরক্ষিত নারী আসনসহ মোট ২৯৮টি আসন নিয়ে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে।
ছয় দফা সম্পর্কে বলতে গিয়ে শেখ মুজিব সাহিত্যিক সৈয়দ শামসুল হককে বলেছিলেন, ‘আমার দফা আসলে তিনটা। কতো নেছো (নিয়েছ), কতো দেবা (দিবে), কবে যাবা?’
১৯৭০ সালে পাকিস্তান সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের রিপোর্ট মতে, উন্নয়ন ও রাজস্ব খাতে পূর্ব পাকিস্তানের তুলনায় পশ্চিম পাকিস্তানে ৬০ শতাংশ বেশি ব্যয় করা হয়েছে। ফলে পশ্চিমের মাথাপিছু আয়ও বহুগুণ বেড়েছে। তার সঙ্গে রাজনৈতিক বৈষম্য তো ছিলই। প্রশাসনে বাঙালিদের নিয়োগ দেওয়া হতো না। নেওয়া হতো না সেনাবাহিনীতেও। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক বৈষম্যও মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ১৭ দিনের পাক-ভারত যুদ্ধের সময় ছয় দফার আশু পটভূমি তৈরি হয়েছিল। এই যুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তান সামরিক দিক থেকে সম্পূর্ণ অরক্ষিত ছিল। সে কারণে এই অঞ্চলের রাজনীতিবিদ ও লোকজনের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল। শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘এই যুদ্ধের পর পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টি নতুন গুরুত্ব পেয়েছে। আমাদের ভবিষ্যত্ নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। ’
পাক-ভারত যুদ্ধের সময় ভারত পূর্ব পাকিস্তানে আক্রমণ না করায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘চীনের ভয়ে ভারত পূর্ব পাকিস্তানের যুদ্ধে জড়াতে সাহস করেনি। ’ জবাবে শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘পূর্ব পাকিস্তানকে যুদ্ধকালীন এতিমের মতো ফেলে রাখা হয়েছে। ভারতীয় সৈন্যরা যদি দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত লেফট-রাইট করে হেঁটে যেত, তবু তাদের বাধা দেওয়ার মতো অস্ত্র বা লোকবল কিছুই পূর্ব বাংলার ছিল না। আর চীনই যদি আমাদের রক্ষাকর্তা হয়, তবে পশ্চিম পাকিস্তানের বদলে চীনের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধলেই হয়। ’
এর পর থেকেই শেখ মুজিবকে বারবার গ্রেপ্তার করে কারাগারে আটক রাখা হয় এবং তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। তখনই শোনা গেল ‘জেলের তালা ভাঙব, শেখ মুজিবকে আনব’ স্লোগান।
ছয় দফা আন্দোলনের শুরু থেকেই রাজনীতিবিদদের সঙ্গে শিক্ষার্থীরাও যুক্ত ছিলেন। নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে কারখানার শ্রমিকরাও এর সঙ্গে শরিক হলেন। কিন্তু এর আগে বিভিন্ন আন্দোলনে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে মূলত শিক্ষার্থীরাই ভূমিকা পালন করেছিলেন। পরে উনসত্তর সালের গণ-অভ্যুত্থানে কৃষকরাও আন্দোলনে যোগ দেন। কারণ শেখ মুজিব সারা দেশের মানুষকে এটা বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন, পশ্চিম পাকিস্তান আমাদের সম্পদ লুটে নিচ্ছে এবং বাঙালিদের পদে পদে বঞ্চিত করছে। উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান বঙ্গবন্ধুকে বাংলার অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। এরপর সত্তরের নির্বাচনের গণম্যান্ডেট ছিল তাঁর একক ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতৃত্বের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি। বস্তুত ছয় দফার পর থেকেই তিনি বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা হয়ে উঠতে শুরু করেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তাঁকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দেওয়া হয় এবং এর পর থেকেই তিনি হয়ে উঠলেন পরাধীন-শোষিত বাঙালির মুখপাত্র।
১৯৬৬ থেকে ১৯৭০—চার বছরে তিনি এই ভূখণ্ডের অপরাপর সব নেতাকে ছাড়িয়ে গেলেন। ছয় দফাভিত্তিক শেখ মুজিব হয়ে উঠলেন বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রধান পুরুষ ও প্রতীক। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের দূরদর্শিতা, গভীর দেশপ্রেম ও বাংলার মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা তাঁকে বাংলার আপামর মানুষের হূদয়ে হিমালয়সম উচ্চতায় আসীন করেছে।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও মহান স্বাধীনতা বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার চূড়ান্ত পরিণতি। গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর সুপরিকল্পিত ও ধারাবাহিক রাজনৈতিক কর্মসূচি অনুসরণ করেই একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর জাতি তার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য খুঁজে পায়। ছয় দফা ঘোষণার পাঁচ বছরের মধ্যে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে জন্ম নিল বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই রাষ্ট্রের মহান স্থপতি।
আজ তাঁরই কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের প্রাণের বাংলাদেশ একটি আত্মমর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। পিতার রাজনৈতিক দর্শনকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে শেখ হাসিনার আত্মনিবেদন ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব বাংলাদেশকে অচিরেই পৌঁছে দেবে কাঙ্ক্ষিত স্থির লক্ষ্যে। যে লক্ষ্য বাস্তবায়নের স্বপ্ন নিয়ে এ দেশের অগণিত রাজনৈতিক কর্মী মহান মুক্তিযুদ্ধসহ সুদীর্ঘ সংগ্রামের কণ্টকাকীর্ণ বন্ধুর পথে আত্মাহুতি দিয়েছেন।
লেখক : সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –- দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ, পথেই ঝরল ২ প্রাণ
- আগুন নেভাতে আসতে ‘দেরি করায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা
- আগুন নেভাতে আসতে ‘দেরি করায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা
- চাঁদা তুলে খেলতে আসা দলই গড়ল ইতিহাস
- মিল্টন সমাদ্দারের অপকর্ম তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি
- জুমার নামাজের ফরজ ও হারাম
- ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শুরু, পরীক্ষার্থী ৩৩৮০০০
- তানজানিয়ায় বন্যা-ভূমিধসে ১৫৫ জনের মৃত্যু
- ‘পুষ্পা: দ্য রুল’ সিনেমা মুক্তির আগেই ১০০০ কোটির ব্যবসা!
- ২ মে থেকে বৃষ্টির সম্ভাবনা, হতে পারে কালবৈশাখীও
- বীরগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
- ফুলবাড়ীতে বৃষ্টির জন্য বিশেষ নামাজ আদায়
- গাইবান্ধায় যুব উন্নয়নে সরকারি উদ্যোগ নিয়ে মতবিনিময় সভা
- দিনাজপুরে বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায়
- রংপুরে ইসতিসকার নামাজ আদায়
- দ্বিতীয় সাক্ষাতেও গুজরাটকে হারাল দিল্লি
- খুন হওয়ার ভয়ে বাড়ি ছাড়লেন সালমান খান
- সব রোগ-ব্যাধি থেকে শেফা লাভের সূরা
- জিম্মি এক ইসরায়েলি-আমেরিকানের ভিডিও প্রকাশ করেছে হামাস
- কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ
- বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী
- র্যাবের নতুন মুখপাত্র আরাফাত ইসলাম
- গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন
- গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ
- মরিশাসের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর বৈঠক
- এভিয়েশন শিল্পের উন্নয়নে সহযোগিতা করতে চায় যুক্তরাজ্য
- সব ডিসি-এসপির সঙ্গে ইসির বৈঠক আজ
- হিট অ্যালার্ট আরো তিনদিন বাড়লো
- বিআরটিএর অভিযানে ৪০৪ মামলায় ৯ লাখ টাকা জরিমানা
- ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী
- সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশ: অর্থমন্ত্রী
- দিনাজপুরের হাকিমপুরের হিলিতে শিক্ষক-কর্মচারী কো-অপারেটিভ ক্রেডিট
- দিল্লী হাইকমিশনে স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত
- ৬ শতাধিক পটল গাছ উপড়ে ফেলল দুর্বৃত্তরা, দিশেহারা কৃষক
- চুমু খেতে চাওয়া সেই পীরজাদা হারুনকে দলে নিলেন নিপুণ!
- ঈদে পার্বতীপুর- জয়দেবপুর রুটে চলবে ৩টি বিশেষ ট্রেন
- বীরগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
- আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এডিবির আরো সহায়তা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী
- ইস্তিসকার নামাজের সময় ও বিধি-বিধান
- ঈদের দিন বন্ধ থাকবে আন্তঃনগর ট্রেন
- রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সহিংসতা বাড়ছে
- বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি
- বুয়েটে অপরাজনীতি হচ্ছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে: সেতুমন্ত্রী
- ‘ডানপন্থী রাজনৈতিক দল নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করে না’
- গোর-এ-শহীদ ময়দানে ৬ লাখ মুসল্লির নামাজ আদায়
- পরীক্ষামূলক জিরা চাষে কৃষকের বাজিমাত
- টানা ৬ দিন বন্ধের পর হিলি স্থলবন্দরে আমদানি-রফতানি শুরু
- আইপিএলের মাঝপথে হঠাৎ দেশে ফিরলেন মুস্তাফিজ
- দিনাজপুরে হলিল্যান্ড কলেজে ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
- দিনাজপুর জেলা ছাত্রলীগের ৫০০ বৃক্ষের চারা বিতরণ-রোপণ