• শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২০ ১৪৩১

  • || ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

নবাবগঞ্জের সিতারকোট বিহার এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে

প্রকাশিত: ৪ মার্চ ২০২৪  

অযত্নে অবহেলায় হারিয়ে যাচ্ছে দিনাজপুর নবাবগঞ্জের কালের সাক্ষী হয়ে থাকা, ঐতিহাসিক নিদর্শন সীতারকোট বৌদ্ধ বিহার। পর্যটন কেন্দ্রের অপার সম্ভাবনাময় বিহারটিতে সীমানা না থাকায় পরিণত হয়েছে চারণভূমিতে। প্রায় ৩ একর জমির ওপর অবস্থিত সীতারকোর্ট প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার।

জনশ্রুতি রয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জনপ্রিয় দেবতা রামের স্ত্রী সীতাকে নিয়ে। পঞ্চবটী বনের গভীরে বনবাস দিয়ে তার থাকার জন্য তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল একটি কুঠুরি। ঐ কুঠুরিই হলো সীতারকোট এমনটি দাবি স্থানীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের। তাই এটি সীতা কোট নামে পরিচিত।

প্রায় ৩৫০ বর্গফুট ফুটের বিহারটিতে ছোট-বড় সব মিলিয়ে ৪১টি কক্ষ রয়েছে। উত্তর দিকের বাহুতে রয়েছে ৮টি কক্ষ। অন্য তিন বাহুতে রয়েছে ১১টি করে। নিপুণ হাতের ইমারতের লম্বা, মধ্যম ও ছোট্ট-ছোট্ট ইট চুন-সুরকি দ্বারা বিহারটি নির্মাণ করা হয়েছে।

১৯৬৮ সালে জনাব আবুল কালাম মোহাম্মদ জাকারিয়ার উদ্যোগে জেলা পরিষদের অর্থায়নে ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কারিগরি সহায়তায় খননে আবিষ্কৃত হয়েছিলো সীতাকোট বৌদ্ধবিহার।

পরবর্তিতে ১৯৭২-১৯৭৩ সালে ও খনন চালানো হয়েছিলো এই বিহারে। খননের পর সে সময় বিহারের কিছু অংশ সংস্কার করা হয়। এর পরে আর কোনো সংস্কার করা হয়নি। ফলে দীর্ঘদিনেও বিহারটি সংস্কার না করায় বিহারের স্থাপনা ভেঙে গিয়ে বিলুপ্তির পথে। অপর দিকে বিহারে নেই কোনো শৌচাগার, বিশ্রামাগার। ফলে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীদের ভোগান্তির শেষ নেই।

সীতারকোর্ট বৌদ্ধ বিহারের বিভিন্ন অংশ ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি বেদখল হয়ে যাচ্ছে এখানকার জমি। তাই নির্দশনটি রক্ষাসহ দ্রুত সংস্কারের দাবি এলাকাবাসী ও দর্শনার্থীদের।

গত শনিবার জয়পুরহাট পাঁচবিবির মহিপুর হাজী মহসিন সরকারি কলেজ থেকে শিক্ষা সফরে এসেছেন সম্মান পড়–য়া অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নবাবগঞ্জ উপজেলাতে আশুড়ার বিল এবং পাশেই সীতারকোর্ট বিহারের অবস্থান। যার জন্য আমরা এখানে সবাই মিলে শিক্ষা সফরে এসেছি। এখানে এসে নানান সমস্যা পেয়েছি। তার মধ্যে টয়লেট এবং ভালো মানের খাবারের হোটেল না থাকায় আমরা বেশি বিপাকে পড়েছি। দর্শনার্থীদের কথা চিন্তা করে টয়লেট, রাস্তা, ভালো মানের খাবার হোটেলের ব্যবস্থা করা জরুরি।

স্থানীয় সুদীন চন্দ্র জানান, এখানে গত কয়েক বছরের চেয়ে দর্শনার্থী বেড়ে গেছে। তবে রাস্তা না থাকার কারণে দর্শনার্থীরা আসতে পারে না। তবে রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে। যদি অন্য সমস্যাগুলোও সমাধান করা হতো তাহলে দর্শনার্থী আরও বাড়বে।

মহিপুর সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আ.ফ.ম মাহবুবুল হায়দার জানান, সরকার যদি এগুলোকে সংস্কারের উদ্যোগ নিতো তাহলে ভালো হতো। সীতারকোর্ট বিহার সংস্কার না করা হলে এক দিন হারিয়ে যাবে। পরবর্তী প্রজন্ম জানতেই পারবে না ঐতিহ্যবাহী সীতারকোর্ট বিহারের কথা।

নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান জানান, সীতারকোট বিহারটি সংস্কার ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করণের লক্ষ্যে উপজেলা পরিষদ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি তিনি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –