• শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২০ ১৪৩১

  • || ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

বাক-শ্রবণপ্রতিবন্ধী ইন্দ্রজিত সাহার সাফল্যে এলাকায় খুশির বন্যা

প্রকাশিত: ২৭ নভেম্বর ২০২৩  

অদম্য ইচ্ছা শক্তির কাছে যে কোন প্রতিবন্ধতা পরাজয় বরণ করে এটি প্রমান করেছেন দিনাজপুরের বীরগঞ্জের বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী ইন্দ্রজিত সাহা। সদ্য প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষায় দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড হতে ৩.২৫ পয়েন্ট পেয়ে পাশ করেছে সে। তার এই ফলাফলে পরিবারের লোকজন যেমন খুশি তেমনি খুশির হয়েছে প্রতিবেশি এবং তার শিক্ষকরা। 

প্রতিবন্ধীরা একটু সহযোগীতা পেলে অসাধারণ সাফল্য এনে দিতে পারে এটি একটি উদাহরন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তার সাফল্যের পিছনে রয়েছে শিক্ষক এবং বন্ধুদের অকৃত্রিম সহযোগীতা। এ কারণে তাদের কাছে কৃজ্ঞতা প্রকাশ করেছে পরিবারের লোকজন।

উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের প্রসাদপাড়া গ্রামের একজন মুদি ব্যবসায়ী সুদর্শন সাহার ছেলে ইন্দ্রজিত সাহা। মা পপি রানী সাহা একজন আদর্শ গৃহিনী। পরিবারের এক বোন এবং এক ভাই। বোনের বিয়ে হয়েছে অনেক আগেই। পরিবারের ছোট সন্তান হিসেবে সে বেশ আদর করতো। কিন্তু প্রতিবন্ধী হিসেবে সামাজিক অবহেলা এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতায় ভাবিনি সে এতোদুর লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারবে। তবে শিক্ষকদের পাশাপাশি বন্ধু সুমন দেবনাথ ছায়ার মতো ইন্দ্রজিতের পাশে থেকে অকৃত্রিম বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল বলে তার এই সাফল্য বলে জানিয়েছে সে। কারণ একমাত্র সুমন দেবনাথ ইন্দ্রজিতের ভাষা বুঝতে পারে।

ইন্দ্রজিত ২০১৫সালে অনুষ্ঠিত সমাপনী ঝাড়বাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে জিপিএ ৫ ও বৃত্তি প্রাপ্ত। পরে সে ঝাড়বাড়ী দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় হতে ২০১৮সালে অনুষ্ঠিত জেএসসি পরীক্ষায় ৩.৯২ পয়েন্ট পায়। এরপর একই বিদ্যালয় হতে ২০২১সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় ৪.১১ পয়েন্ট পায়। সর্বশেষ ঝাড়বাড়ী মহাবিদ্যালয় হতে ২০২৩সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায়  ৩.২৫ পয়েন্ট পায়।

আগামী দিনে ইন্দ্রজিত সাহা সমাজে অবহেলিত জনগোষ্ঠীর সেবা করার যাবার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বাবা সুদর্শন সাহা বলেন, আমরা তার ফলাফলে গর্বিত। প্রতিবন্ধী বলে তার জন্য এখন আর কষ্ট পাই না। সমাজের সহযোগিতা নিয়ে আমরা তাকে উচ্চ শিক্ষিত করতে চাই। আগামী দিনেও সকলে তার জন্য সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিবেন বলে তিনি আশা করেন।

তার সাফল্যে বন্ধু সুমন দেবনাথ বলেন, প্রতিবন্ধীরা সমাজে একটু অবহেলিত থাকে। কিন্তু আমরা বন্ধুরা ইন্দ্রজিকে বুঝতে দেইনি সে প্রতিবন্ধী। আমি তার ভাষা বুঝতে পারতাম। তাই তার প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে পেরেছি। তার সাফল্যে আজ নিজেকে সার্থক মনে হয়েছে।

ইন্দ্রজিত সাহার সাফল্যে প্রতিবেশি সংকার কুমার সাহা জানান, একজন বাক-শ্রবণপ্রতিবন্ধী হিসেবে ইন্দ্রজিত বাবা-মাসহ এলাকার মুখ উজ্জ্বল করেছে। তার এই সাফল্য আমরা গর্বিত এবং এটি সমাজে অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোঃ মতিউল ইসলাম জানান, সমাজের অবহেলা আর অজ্ঞতাকে পিছনে ফেলে প্রতিবন্ধীরা এগিয়ে যাচ্ছে তার উদাহরণ আমাদের ইন্দ্রজিত সাহা। আমরা যদি অবহেলা না করে তাদের পাশে দাঁড়াই তাহলে তারা সমাজে মাথা উচু করে সমাজে ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। শিক্ষক হিসেবে ইন্দ্রজিত সাহার সাফল্যে আমি আনন্দিত ও গর্বিত।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –